=====================================
বর্তমান পুঁজিবাদী কর্পোরেট গণতন্ত্রে ৪টি পক্ষকে এক করতে পারলে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করা যায়। দুর্নীতি একমাত্র টুলস্ যা এই ৪টি পক্ষকে এক হতে সাহায্য করে। এ ৪টি পক্ষ হলো- এক সেনাবাহিনী তথা নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনী, দুই আদালত, তিন নির্বাচন কমিসন, আর ৪ নম্বর হলে রাজনৈতিক দল। আমরা এই চারটি পক্ষ কিভাবে দেশে ক্ষমতা বদলাতে পারে তা পাকিস্তানে ইমরান খানের পতন প্রত্যক্ষ করে প্রমাণ পেয়েছি। আমাদের দেশেও এমনই চলছে। একটু চোখ-কান খোলা রাখলে তা সহজেই বুঝায় যাবে। তবে এর সাথে পঞ্চ পাণ্ডবের ৫ নম্বর শক্তি হলো সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। যে সকল দেশের সরকার দুর্নীতি করেও সাম্রাজ্যবাদীদের তল্পীবাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তারা রেহাই তো পায়ই বরং উল্টো সহায়তা পায়। অন্যদিকে যারা দুর্নীতি না করে, নিজ দেশের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে পররাষ্ট্রনীতি প্রবর্তনে সচেষ্ট হয়- তাদেরকে এই চারটি পক্ষকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এটাই পশ্চিমা গণতন্ত্র। যা স্বৈরতন্ত্রকেও হার মানিয়েছে।
নিশ্চয়ই আমি একজন বাংলাদেশী এবং ইমরান খানকে পছন্দ করি। তিনি একজন ক্রিকেট লিজেন্ড। ইমরান খান একজন কেবল একজন সমাজসেবক নয় শিক্ষানুরাগীও। ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণ ছাড়াও তিনি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। রাজনৈতিক দল গঠন থেকে ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত আমরা তার সম্পর্কে সামান্যই জানতাম। কিন্তু প্রধান মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে নিয়মিত একাধিক সংবাদ কর্মীর বক্তব্য, টিভি টক-শো এর মাধ্যমে যা জানতে পেরেছি ইমরান খানের নেতৃত্বের সরকার চলাকালীন পাকিস্তান উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথেও সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে। এমন কি বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের অবনতি দৃশ্যমানভাবে কম হয়েছে। বিশ্ব নেতৃত্বের অংশ হতে পেরেছিলো ইমরান খান।
আগেই বলেছি সাম্রাজ্যবাদিরা দরিদ্র ও পিছিয়ে পরা দেশসমূহে দুর্নীতি প্রোমোট করে। দুর্নীতিবাজ লোকেরা ক্ষমতায় থাকলে সাম্রাজ্যবাদিদের সুবিধা হয়। তারা অনায়াসেই তাদের স্বার্থের অনুকূলে পররাষ্ট্রনীতি প্রবর্তনে রাষ্ট্রগুলিকে বাধ্য করতে পারে। আমেরিকার বিশ্বব্যাপী একাধিপত্যতা আজ খর্ব করতে চলেছে চীন-রাশিয়া যৌথভাবে। রাশিয়া ও চায়নাকে সরাসরি কিছু করতে না পেরে আমেরিকা চায়না-রাশিয়াকে সমর্থন করে এমন দেশগুলোতে রেজিম চেঞ্জ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নেপাল, শ্রলঙ্কা, ইউক্রেন, পাকিস্তান নিকটতম উদাহরণ।
পাকিস্তানের আর্মি, আদালত, নির্বাচন কমিসন যে আমেরিকার পক্ষে তা সার্বিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বা বলা যায় এ পক্ষগুলো তার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছে। ইমরান খানের পতন হয়েছে এবং ইমরান খান ও পাকিস্তানের জনগণ সমগ্র শক্তির প্রতিপক্ষ তাও প্রমাণিত হয়েছে। আমেরিকান ভাষ্যকারের বক্তব্য অনুসারে যে চারটি কারণে ইমরান খানকে সরানো হয়েছে, সে চারটি কারণ যদি বর্তমান সরকার পূরণ করে বা পূরণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা হবে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের আত্মহত্যার সামিল। কারণ, আমেরিকা একটি অনুগত ও দূর্বল পাকিস্তান চায়। তার জন্য তারা কখনোই অর্থনৈতিক বা সামরিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হতে দেবে না পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের বর্তমান যেই সামরিক শক্তি তা অনেকাংশে চায়নার উপর নির্ভরশীল। আমেরিকা নিজে তো নয়ই, তার কথা শোনে- যেমন ফ্রান্স, জার্মানী, তুরস্ক সেখান থেকেও পাকিস্তানকে সামরিক সামগ্রী রপ্তানীতে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। ঠিক এ কারণেই ইমরান খান রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছিলো।
বর্তমানে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গণে যেই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত থেকে মুক্তির একটা পথ তৈরি হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে ঐ চারটি পক্ষকে সততা প্রদর্শন করতে হবে। তারা যদি
সৎ অবস্থানে ফিরে যায়, তাহলে নির্ঘাৎ ইমরান খান বিপুলভাবে বিজয়ী হবেন। আর বিজয়ী হয়ে যেই ফরেন পলিসি আনবে তার বিরুদ্ধে যদি আমেরিকা আর্মি, আদালতের উপর কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি করে তাহলে তারা বলতে পারবে যে, তারা আবার যদি জনগণের বিপক্ষে যায়- তাহলে জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে। ফল স্বরূপ পাকিস্তান আমেরিকার কবল থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।
আমার মনে হয় পাক আর্মির ভেতর এমন ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে। কারণ, চায়না ছাড়া পাকিস্তানকে কেউ অস্ত্র দেবে না- বা দিচ্ছে না তা সেনা প্রধানের সাক্ষাৎকারে বুঝা গেছে। রাশিয়ার সাথেও আর্মি ভালো সম্পর্ক চায়। কিন্তু আমেরিকানদের সাথে করা কমিটমেন্ট থেকে বের হবার কোনো সুযোগ তারা বের করতে পারছিলো না। আমেরিকান হস্তক্ষেপ প্রকাশ করে দেয়ার পেছনেও তাদের হাত থাকতে পারে। যেন সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে।
সেনাবাহিনী দেশপ্রেম নিয়ে কারোর কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। আমার এই সন্দেহ যদি সঠিক হয়, তাহলে ইমরান খান ২/৩ মেজরিটি নিয়ে পাশ করলে আইন প্রণয়নে পাক আর্মি সাহায্য করবে। এবং সিপিইসি প্রজেক্টসহ রাশিয়ার সাথে সম্পর্কোন্নয়নেও তারা খানকে সাহায্য করবে। ১০টি ড্যাম নির্মাণ, হাইড্রোবিদ্যুৎ প্লাট নির্মাণ সকল ক্ষেত্রে চায়না জড়িতে। অন্যদিকে ইমরান খান সৎ মানুষ। দেড় বছর পর যদি হঠাৎ ইমরান খান পরাজিত হতো, তাহলে আর কোনো আশা ছিলো না এ সকল কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার। যদি নতুন করে ৫ বছরের জন্য ইমরান খান আসে, তাহলে সকল প্রজেক্টগুলো সম্পন্ন হবে আর তাতে, কৃষি ও শিল্পখাতে পাকিস্তান অনেক এগিয়ে যাবে। তখন আমেরিকা তথা আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংকের কাছে অর্থের জন্য ধর্ণা দিতে হবে না।
যদি এমন ভাবনা না থাকে তাহলে বুঝতে হবে পাক আর্মি পাকিস্তানের সার্বিক অগ্রগতি চায় না। আর তাই তারা সব সময় করাপটেড পক্ষের সাথে থাকে। যখন তারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন নতুন কাউকে এনে তাকে সবক শেখায়। যে কারণে পাকিস্তানে সব সময় কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়। আর এ কাজে তারা আদালত ও নির্বাচন কমিশনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। আর দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক পক্ষতো আছেই। এইবারও যদি কোয়ালিশন সরকার হয় বুঝে নিতে হবে, পাক আর্মির হাতে পাকিস্তান বন্দী। আমেরিকার আগ্রাসন সেটিও একটি সমঝোতামূলক পদক্ষেপ। আর এ অবস্থায় পাকিস্তানের ভবিষ্যত খুবই অন্ধকারাচ্ছন্ন। এ অবস্থায় চায়নাও জেনে যাবে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড। তারা কখনোই সেনা বাহিনীকে বিশ্বাস করবে না। পাকিস্তানী আর্মি কি এতো বড়ো রিস্ক নেবে ?
আশা করি শেষের মন্তব্যটি মিথ্যে প্রমাণিত হবে এবং পাকিস্তানে শান্তি আসবে।
---------------------------------
ইমরান ভক্ত
গীতিকার সাগর আল হেলাল
No comments:
Post a Comment