সুবল খুব মেধাবী এক ছাত্র ছিলো। বাবা বনেদী লোক। আভিজাত্যের অহমিকায় তিনি মানুষকে মানুষ মনে করতেন না। পূর্ব পুরুষেরা জমিদার ছিলেন। সেই জমিদারী না থাকলেও জমিদারী স্বভাব যায়নি তার। সম্পদ যা আছে, তা-ও কম নয়। নিজ হাতে ধ্বংস না করে যদি বসে খায় আরও দুই-চার পুরুষ খেতে পারবে কোনো সংশয় নেই। সুবলের এসব ভালো লাগে না। পড়া-লেখায় আগা গোড়াই সে ভালো। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ শেষ করলে, বাবা তাকে ডাক্তারী পড়ার পড়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সুবল রাজি হয় না। নিজেদের সমাজের পিছিয়ে পরা মানুষের দুঃখ কষ্ট তার মনকে স্পর্শ করে। তাই মানুষের জন্য কিছু করতে চায় সে। আর তাই সমাজ বিজ্ঞান নিয়ে পড়া-লেখা করে তাদের জন্য কিছু করবে এটাই জীবনের লক্ষ্য। নিজের ইচ্ছে ব্যক্ত করায় বাবা খুব ক্ষিপ্ত হয়। সেই থেকে বাড়ি ছাড়া সে। বিশ্ব বিদ্যালয়ের পড়ার খরচ মা নানাভাবে পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো রেজাল্ট করে সে। সমস্যা হয়ে যায় সমাবর্তনী অনুষ্ঠানের দিনে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছিলো। সমাবর্তনী অনুষ্ঠানের পর কোনদিকে যাবে এ নিয়ে সুবল খুব চিন্তিত ছিলো। বাড়িতে গেলে সেই পুরনো খেচখেচানী। বাবার চোখ রাঙানী আর মায়ের আপোষহীন অনুরোধ চুপ থাকার। অনুষ্ঠানে গিয়ে জানতে পারে এক মহান ব্যাক্তি তাদের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আসছেন। তিনি স্বামী বিবেকানন্দের উপর বই লিখেছেন। সমাজ সেবাই তার জীবনে ব্রত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক কষ্টে তার সিডিউল পেয়েছে। তিনি বক্তব্যও দেন খুব ভালো। সুবল বিষয়টি জানতে পেরে বেশ উজ্জীবিত হলো। নিশ্চয়ই তার বক্তব্যের পর একটা করণীয় ঠিক করতে পারবে সে। মানুষের জন্য কাজ করা ইচ্ছেতো আছেই, পড়ালেখার মাধ্যমে অনেক ছিুই সে জানতে পেরেছে। কিন্তু কিভাবে আরম্ভ করবে তা সে ঠিক করতে পারছে না।
আরতী দেবীর সময় নিয়বর্তিতা দেখে মুগ্ধ হলো সুবল। তিনি যথা সময়ে সভাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। গোল গাল চেহারা আরতী দেবীর। রাশভারী বলেই মনে হলো সুবলের কাছে। দেশী শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে হাতের কব্জি পর্যন্ত লম্বা হাতার ব্লাউজ পরা। মোটা লেন্সের চশমা চোখে। চেহারা দেখেই সম্মান করতে ইচ্ছে করে যেনো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে উষ্ণ অভ্যার্থনা জানালেন। সবার চোখে মুখেই সমীহের ভাব। সুবল ইচ্ছে করেই নিজেকে একটু আাড়াল করে রেখেছে। সে আসলে আরতী দেবীর বক্তব্য শুনতে চায়। মানুষের জন্য তার পরিকল্পনা কি, সেটা বুঝতে চায়। আর তাই পেছনের দিকে মাইকের সাউন্ডবক্সের কাছাকাছি বসেছে সে। যথা সময়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য আরম্ভ হলো।
সুবল মন্ত্রমুগ্ধের মতো আরতী দেবীর বক্তব্য শুনলো। এতো সুন্দর করে কথা বলা যায় ? নিজেকেই প্রশ্ন করলো যেনো। কিছু কথা নোটও করলো। কিন্তু তার যেনো তৃষ্ণা মিটলো না। আরতী দেবীর কাছ থেকে সে আরও অনেক কিছু জানতে চায়, শিখতে চায়। অমন সুন্দর করে কথা বলা শেখাও তার কম ইচ্ছে নয়। আরতী দেবী তার কথাগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করলো যে, অনুষ্ঠানে পিনপতন নিস্তব্ধতা নেমে এলো। সকলেই গভীর মনোযোগ দিয়ে তার বক্তব্য শুনলো।
হলে ফিরে বিছানায় বসে বসে নানা কিছু ভাবছে সে। আরতী দেবীর বাচন ভঙ্গি, মানুষের প্রতি তার দরদমাখা বাক্যগুলো সুবলের কানে বেজেই চলেছে। সুবল যা করতে চায়, তা-ই যেনো বলে গেলেন আরতী দেবী। দু-দিন বাদেই হলের ছিট ছেড়ে দিতে হবে। এই দুই দিনের মধ্যেই তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে কি করবে ? মনের মধ্যে খুব অস্থিরতা কাজ করছে। কিছুই ভালো লাগছে না। শেষমেশ চাদর মুড়ি দিয়ে সটান শুয়ে পড়লো। বেশি কিছু ভাবতে আর ভাল্লাগছে না।
-
চলবে-
সাগর আল হেলাল
৮.৪.২২
-------------------
No comments:
Post a Comment