সাগর আল হেলাল
===================
ফেসবুকে খবরটা দেখার পর থেকে ভুলতে
পারছি না। বিবিসি’র সাথে সাক্ষাৎকারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আফশোস করে বলেছেন, তিনি
একটি শক্তিশালী বিরোধী দল পেলেন না। মাথা থেকে কথাটা যাচ্ছিলোই না।
নিজের বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, এ কথার পেছনে কি যৌক্তিকতা আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন একটা কথা বলতে গেলেন কেন? হঠাৎ মিয়াভাই কথা বলে উঠলেন।
মিয়াভাই হলো সিলিং এ ঝুলে থাকা চৌত্রিশ বছর আগে যুবক থাকা সবুজ রঙের ফ্যান। বাইরে নিয়মিত মুছে পরিস্কার রাখায় তাকে বৃদ্ধ বলা বে-মানান। কারণ এমন তরতাজা একজনকে বৃদ্ধ বলা যায় না। তাই আমি তাকে মিয়াভাই বলে সম্বোধন করি। তাকে বয়স্ক বলা যায়। তা-ও শুধু একটি কারণে। আর তা হলো- দেয়ালের সুইচ টিপলে সে যখন দৌড়ায় তখন ছন্দের তালে তালে ক্যারাৎ ক্যারাৎ শব্দ করে। আমি মিয়াভাই ডাকলে শব্দটা যেনো একটু হার্স হয়ে যায়, বুঝি উনি রাগ করছেন।
যাহোক, মিয়াভাই আমার সাথে রাগ করুন আর যাই করুন, তিনি আমার অনেক সমস্যার সমাধান করে দেন। ছোটোবেলায় রেলগাড়িতে নানার বাড়ি যেতাম। রেলের চাকার ছন্দে তালে তালে গান গাইলে কেমন মধুর লাগতো। এখানে মিয়াভাইও তার ক্যারাৎ ক্যারাৎ ছন্দের তালে অনেক কথা আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে থাকেন।
রমজান মাস হওয়ায় আমার ও মিয়াভাই দুজনের শরীরই মনে হয় দুর্বল। আমি চিৎ হয়ে শুয়ে মিয়াভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উক্তিটি নিয়ে ভাবছিলাম। ঘুম ঘুমও লাগছিলো। চিন্তাটা মাঝে মাঝেই ছিঁড়েও যাচ্ছিলো। হঠাৎই মিয়াভাইয়ের গলার আওয়াজ পেলাম। ঘুমটা পাশে চলে গেলো। মিয়াভাই যা যা বলেছে, আপনাদেরকে জানিয়ে দিলাম। এ কথাগুলো আমার নয়, মিয়া ভাইয়ের-
নড়া দাঁতে যায়না খাওয়া হাড়
কলিজা খা, হাড়ের আশা ছাড়।
হাড়ের জন্য করিলে আফশোস
দাঁতের ফাঁকে আটকে যাবে গোশ।
গোশ ছাড়াতে উঠে যাবে দাঁত,
তখনে তুই ক্যামনে খাবি ভাত !
অনটনে পড়েছে আজ দেশ
মানুষেরা করছে হাপিত্যেশ,
মনে রাখিস এমন অবস্থায়
সত্যি কিন্তু গণেশ উল্টে যায়।
মিয়াভাই আরও হয়তো কিছু বলতো বা বলেছিলো। কিন্তু, রোজা থাকায় পাশ থেকে ঘুম কখোন আমার চোখে বসেছে খেয়াল নেই। মসজিদে ইফতার করার জন্য আহ্বান করায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। মাথাটা ঝিমঝিম করছিলো। বুকের উপর মিয়াভাই তখন অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো। আমার কানে ভেসে এলো- ক্যারাৎ, ক্যারাৎ, ক্যারাৎ . . . .
-
১৮.০৪.২০২২
No comments:
Post a Comment