================
সাগর আল হেলাল
কুষ্টিয়ার মাটিতে গুণী সৃষ্টির উপদান আছে, এ কথা প্রকাশ না করলে আমার অন্যায় হবে। কুষ্টিয়ার পলি উর্বর মাটিতে লালিত- লালন, কাজী মোতাহার হোসেন, মীর মোশাররফ হোসেন, কাঙ্গাল হরিনাথ, কাজী আনোয়ার হোসেন আরও অসংখ্য গুণী ও বিখ্যাত মানুষের কথা জানি। আমি সেই সকল মানুষের নাম লিখে এই লেখাটা দীর্ঘ করতে চাই না, জানাতে চাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে গভীর শ্রদ্ধ। কারণ উনার এই গর্বিত মাটির সন্তান।
রবি ঠাকুর জোড়াসাঁকো থেকে কাঠের নৌকায় এসে
শিলাইদহে নির্মাণ করলেন সোনার তরী। শিলাইদহে কি আছে ? কেনই বা কুষ্টিয়াতেই উনার
দ্বিতীয় জন্মভূমি হলো ? ইছামতি হয়ে পাবনার পতিসরে আরও একটি কুঠিবাড়ি স্থাপন
করেছিলেন তিনি- কিন্তু সেটা এতো ব্যাপকতা লাভ করতে পারলো না। কেনো পারলো না ? যারা
পতিসরের আশেপাশের মানুষ, তারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন ?
আসলে মাটির গুণ। আমি তেমন কোনো গুণী মানুষ নই।
জীবনের হিসেব-নিকেশে হয়তো অগুণের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু আমার জীবনের একটি ঘটনা
দিয়েই উপলব্ধি করতে পারলাম- গুণী সৃষ্টিতে মাটির ভূমিকা।
কবিতা কাকে বলে তা তখন জানতাম না। বলতে পারেন
সাগর আল হেলাল তখনো ভূমিষ্ট হয়নি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটা ছন্দ কাজ করতো। মানুষ
মনের আবেগ চিঠি লিখে প্রকাশ করে। আমি প্রকাশ করতাম ছন্দাকারে। একটা অন্যরকম ভালো
লাগতো। যাই হোক, ঐ সময়টায় কুষ্টিয়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার (বিস্তারিত পরিচয়
দেয়ার যোগ্যতা ও সুযোগ যদি হয় কখনো, কৃতজ্ঞতার সাথেই দেবো)-এর সাথে পরিচয় হয়
আমার।
ওই পরিবারটি আমাকে অনেক স্নেহ দিয়েছেন। পরিবারের
সবচেয়ে ছোটো সদস্য (তখনকার কথা বলছি) ছেলেটির সাথে কেনো জানি খুব ভাব হয়ে যায়। এই
ভাব-অভাবের কারণে ওকে চিঠি লিখতাম। কখনো ডাকে, আবার কখনো হাতে হাতে। নি:সন্দেহে তা
ছিলো ছন্দে ছন্দে।
ফেসবুকের বদৌলতে দীর্ঘকাল পর হঠাৎ চলতি সপ্তাহে
তার সাথে যোগাযোগ হয়ে গেলো। ভাবছেন, এর সাথে গুণী সৃষ্টির গুণ এর সম্পর্ক কি ?
হ্যাঁ, আমার তেমন যোগ্যতা নেই বলেই- হয়তো আমি গুণী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে
সক্ষম হইনি। কিন্তু কুষ্টিয়ার এই পরিবারটি আমাকে সেই কদর বা সম্মান দিয়েছেন। আমার
সেই ছেলেবেলাকার লেখা চিঠিগুলো খাতায় লিখে সংরক্ষণ করেছিলেন।
দীর্ঘ সময় পর পরিচিত হওয়ার সাথে সাথে আমার সেই
লেখা আমাকে উপহার হিসেবে প্রদান করেছেন। আসলে এরাই সত্যিকারের আমানতদার। আমি না
বুঝলেও, হয়তো ওনারা আমার মধ্যে লিখিয়ে হওয়ার সম্ভাবনাটি আঁচ করতে পেরেছিলেন। আর সে
জন্যই হয়তো নি:স্বার্থভাবে আমার চিঠিগুলো সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন।
ফেসবুকে দেখতে পাই লেখাচুরির গল্প। আর এখানে
ঘটলো দৃষ্টান্ত।কুষ্টিয়ার মাটি ও এখানের মানুষের সাথে আমার আত্মা, আমার জীবন আরও
বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলো- এই পরিবারের কারণে। আমি এই পরিবারের সম্মানিত সকল সদস্যকে
বিনম্র শ্রদ্ধা, ভক্তি-ভালোবাসা জানাচ্ছি। জানাচ্ছি, আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
-
সাগর আল হেলাল
১২.০৪.২০২২
No comments:
Post a Comment